শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন
॥মইনুল হক মৃধা॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় বৃহত্তর যৌনপল্লীর যৌনকর্মী ফারজানা আক্তার মুন্নি (২৬)কে বিষাক্ত ইনজেকশ শরীরে প্রয়োগ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার কথিত রাশেদ খানের বিরুদ্ধে।
মৃত মুন্নি ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের আবু তাহেরের মেয়ে।
গত ১৩ই জুন বেলা ২টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুন্নির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঘাতক কথিত স্বামী রাশেদ খান মুন্নির ঘরে থাকা মূল্যবান জিনিস পত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। সে পাবনা সদর থানার শনিরদিয়া ভবানীপুর গ্রামের ছলিম খানের ছেলে।
যৌনপল্লীর বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফারজানা আক্তার মুন্নি দীর্ঘদিন ধরে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে বসবাস করে। তার কাছে আসা-যাওয়া করত রাশেদ খান। এক পর্যায়ে রাশেদ খান মুন্নির সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় রাশেদ খান মুন্নির উপার্জিত টাকা হাতিয়ে নেয়। যৌনকর্মী মুন্নিও তার সর্বস্ব দিয়ে রাশেদ খানকে বিয়ে করে অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি নিতে চায়। কিছুদিন আগে মুন্নি রাশেদ খানকে নগদ ৩ লাখ টাকা দেয়। এরপর রাশেদ খান তাকে কাবিন রেজিস্ট্রি করে বিয়েও করে। কিন্তু রাশেদ খান চায় মুন্নি যৌনপেশা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করুক। মুন্নি রাশেদ খানের কাছে স্বাভাবিক জীবন চায় আর রাশেদ চায় মুন্নি ওই পেশা চালিয়ে টাকা আয় করে তার হাতে তুলে দিক। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
অসুস্থ মুন্নিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া একাধিক ব্যক্তি জানান, গত রবিবার ভোরে রাশেদ খান তাকে বলে তোমার শরীর দুর্বল একটি ভিটামিন স্যালাইন দিলে ঠিক হয়ে যাবে। তার কথা বিশ্বাস করে মুন্নি রাজি হয়। এরপর রাশেদ খান নিজেই মুন্নির গায়ে স্যালাইন পুশ করে। কিছুক্ষনের মধ্যে মুন্নির শরীরে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এ সময় রাশেদ খান তার ব্যবহার করা মোবাইল ফোনসহ ঘরে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার দুপুরের দিকে তার মৃত্যু হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নিতাই কুমার ঘোষ বলেন, সকাল ৭টার কিছু পর অসুস্থ্য অবস্থায় ফারজানা আক্তার মুন্নিকে হাসপাতালে আনা হয়। এ সময় একজন মানুষের শরীরে বিষ প্রবেশ করলে যেরকম উপসর্গ দেখা দেয় মুন্নির তার সব আলামতই ছিল। এ সময় সে জানায়, রাতে সে বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে দুর্বলতা কাটাতে মধ্যরাতে তার শরীরে ভিটামিন জাতীয় স্যালাইন পুশ করা হয়। সকালে স্যালাইন শেষ করে তার হাতের শীরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষয় প্রয়োগ করা হয়। তার শরীরে অর্গানেক ফসফরাস কম্পাউন্ড(ওপিসি) জাতীয় বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। বিষ তার সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়লে বমি হওয়াসহ বিষ প্রয়োগে যাবতীয় লক্ষণ দেখা দেয়। বিষয়টি বুঝতে পেরেই দ্রুত তাকে ফরিদপুরে স্থানান্তর করা হয়।
এ ঘটনায় গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, বিকেলেই যৌনকর্মী মুন্নি ফরিদপুর হাসপাতালে মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। সেখানে ময়না তদন্ত শেষে লাশ এলাকায় আসবে। এখন পর্যন্ত পরিবার থেকে কোন অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply