বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ০২:৫৭ পূর্বাহ্ন
॥সোহেল মিয়া॥ এক ইঞ্চি জায়গাও যাতে ফাঁকা না থাকে প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা থাকলে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের গড়াই নদীতে জেগে ওঠা চর জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নিয়েও ভূমিদস্যুদের ভয়ে সেখানে ফসল ফলাতে পারছেনা ভূমিহীন কৃষকরা। ফলে বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবী তাদের।
নারুয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, নারুয়ার কোনাগ্রাম মৌজার ৬শ নম্বর দাগে ১৮.৮৪০ একর জমি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত। এর মধ্যে ২০১০ সালে ৯.২০০ একর জমি জামসাপুর, কোনাগ্রাম ও মরাবিলা গ্রামের ১৭ জন ভূমিহীনের নামে ৯৯ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দেন জেলা প্রশাসন। এরপর বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও নারুয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সার্ভেয়ার করে জমি বুঝে দেন। সেই জমি তিন গ্রামের প্রায় ১৫০ জন ভূমিহীন কৃষি আবাদ করে আসছিলেন।
কিন্তু ২০২১ সালে বন্দোবস্তপ্রাপ্তরা জমি চাষ করতে গেলে কোনাগ্রাম গ্রামের শাহাদত মন্ডল, খোরশেদ মন্ডল, আরশেদ মন্ডল ও মোতালেব মন্ডলের নেতৃত্বে শতাধিক ভূমিদস্যু জমি চাষ করতে বাধা প্রদান করে এবং তারা জোড়পূর্বক সরকারী জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন জানার পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারীতে নারুয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ বিশ^াস বাদী হয়ে ১১ জনের নামসহ ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাত করে ভূমিদস্যু কর্তৃক সরকারী জমি দখলের চেষ্টা করায় একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মারামারির ভয়ে ওই জমি চাষ করা বন্ধ করে দেয় ভূমিহীনরা। সেই থেকে এখন পর্যন্ত চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে ওই চরে।
বন্দোবস্তপ্রাপ্ত ভূমিহীন আতিয়ার মন্ডল, রাজ্জাক মন্ডল, আজিম মন্ডল, সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী আমরা জমি বন্দোবস্ত নিয়ে এসে চাষাবাদ শুরু করি। এখানে বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকার পেঁয়াজ, রসুন ও তিল উৎপাদন হয়। গত দুই বছর আমরা চাষ করতে পারছিনা। স্থানীয় ভূমিদস্যুরা জোড় করে জমি দখলের চেষ্টা চালায়। পরে প্রশাসন ওদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমরা কোন দাঙ্গামার মধ্যে যেতে চাইনা। ওরা খুবই ভয়ংকর। কাউকে মানেনা। আমরা চাই আমাদের জমি চাষ করতে।
অভিযুক্ত শাহাদত মন্ডল বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের নামে ভূমিদস্যুর মামলা দিয়েছে। যার কারণে দুই বছর ওখানে কোন ফসল উৎপাদন হয়না। যার ফলে বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আপনাদের নামে তো বন্দোবস্ত নেই তাহলে আপনারা কেন সরকারী জমি চাষ করতে গেলেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর দেননি।
বালিয়াকান্দি উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোঃ হাসিবুল হাসান বলেন, যাদের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে আমরা তাদের জমি বুঝিয়ে দিয়ে আসি। কিন্তু স্থানীয় কিছু ভূসিমদস্যুর কারণে তারা দখলে যেতে ভয় পাচ্ছেন। যারা সরকারী জমি অবৈধভাবে দখল নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষে এক ইঞ্চি জায়গাও যাতে ফাঁকা না থাকে সেজন্য জেলা প্রশাসক নির্দেশনা দিয়েছেন। তারই প্রেক্ষিতে আমরা কোনাগ্রাম চরের খাসজমি চাষাবাদের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। প্রয়োজনে আমরা প্রকৃত ভূমিহীনদের মধ্যে গ্রুপভিত্তিক চাষাবাদের সুযোগ করে দিব।
Leave a Reply