॥স্টাফ রিপোর্টার॥ মশক নিধন ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকল্পে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ৪ঠা আগস্ট সকালে জরুরী সমন্বয় সভা কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগমের সভাপতিত্বে সভায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ ইমদাদুল ইক বিশ্বাস, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মাহফুজার রহমান সরকার, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দীপক কুমার বিশ্বাস, রাজবাড়ী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ, কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলিউজ্জামান চৌধুরী টিটো, বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নূরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহ্রাব ও বার্থা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আক্কাস আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভা সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান।
ডেঙ্গুর জীবাণু ছড়ানো এডিস মশাসহ অন্যান্য মশা নিধনের বিষয়ে উপস্থাপনা করেন সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বাহাউদ্দিন সেখ।
এ সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মোঃ বাকাহীদ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আমিনুল ইসলাম, রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দিলীপ কুমার কর, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভুরাম পাল, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম শেখ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কালেক্টরেটের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, এনজিও প্রতিনিধিগণ, রাজবাড়ী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকল সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দোকান-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী সকল নাগরিককে তাদের বাড়ীর আঙিনা, ঘর, ছাদ-বিশেষ করে যেসব জায়গায় মশার উৎপত্তি হয় সেসব জায়গাগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে থেকে একযোগে কাজ শুরুর মাধ্যমে রাজবাড়ীকে ডেঙ্গুমুক্ত রাখতে ক্রাশ প্রোগ্রামের আওতায় সকলকে তার নিজ নিজ দায়িত্বে অফিস, স্কুল, বাসভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার রাখতে হবে। যতদিন রাজবাড়ীতে এই ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব থাকবে ততদিন এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক দেশকে ডেঙ্গুমুক্ত রাখতে আমরা রাজবাড়ীবাসী সকলে একসাথে একযোগে সবাই মিলে এই ক্রাশ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করবো।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মাহফুজার রহমান সরকার তার বক্তব্যে বলেন, সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক ডেঙ্গু রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে রাজবাড়ী স্বাস্থ্য বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এই জন্য সদর হাসপাতালের পৃথক ২টি ওয়ার্ডে মহিলা ও পুরুষ ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য সার্বক্ষণিক ২জন কনসালট্যান্ট ও ২জন মেডিক্যাল অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন। মূলত ডেঙ্গু রোগ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তরা শুধুমাত্র প্যারাসিটামল খাবে। ৩দিনেও যদি জ্বর না কমে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী চিকিৎসা গ্রহণ করবে। সকলে একযোগে কাজ করলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ডেঙ্গু জীবাণু বাহিত এডিস মশা কামড়ালেই শুধুমাত্র ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডেঙ্গু বাহিত এডিস মশা যাতে জন্মাতে না পারে সে জন্য আমাদেরকে এই মশার লার্ভা ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাজবাড়ী জেলায় এ পর্যন্ত ৫৬জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে ২২জন বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে।
সমন্বয় সভায় রাজবাড়ী পৌরসভা এলাকার ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার বা যেসব জায়গায় মশা জন্মাতে পারে সেসব জায়গায় ওষুধ দেয়ার ব্যাপারে পৌর মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী তার নিজের ০১৭১১৩১৪০৯৮ এবং পৌরসভার স্যানিটারী ইন্সপেক্টরের ০১৭৮১৪৯৪৬৭২ নম্বর মোবাইলে ফোন করার জন্য পৌরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মশক নিধনের কীটনাশক বা ওষুধ ব্যবহারের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণের জন্য সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার ০১৭০০৭১৫৮২২ নম্বরের মোবাইলে যোগাযোগ করতে সভা থেকে অনুরোধ জানানো হয়।
এছাড়াও প্রশাসনের সমন্বয়ে রোভার স্কাউট, গার্লস গাইড ও বিএনসিসির সদস্যরা বাড়ী বাড়ী গিয়ে ডেঙ্গুর বিষয়ে সচেতনতামূলক পরামর্শ প্রদান করবে। তাদের পরামর্শের পরও কোন ব্যবস্থা না নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সভা শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও শহীদ খুশী রেলওয়ে ময়দানের আশেপাশে ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধনের ওষুধ ছিটানো হয়।
মশক নিধনের ওষুধ ছিটানোর সময় রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী সেখানে উপস্থিত হন।
এ সময় তিনি বলেন, ঈদের সময়ে ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত মানুষ যাতে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা পায় সে জন্য আমি সিভিল সার্জনকে শয্যা বাড়ানোর জন্য বলেছি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। তাই আমরা পরিষ্কার পরিছন্ন থাকবো। নিজ উদ্যোগে স্ব-স্ব অফিস, বাড়ী, রাস্তাঘাট ও ড্রেন পরিষ্কার করবো। যার যার জায়গা থেকে যদি আমরা সচেতন হই তাহলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে পারবো।